প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মুগ্ধতা: হাতিয়ার কমলার দিঘি সমুদ্র সৈকত

মেঘনার বিশাল জলরাশির গল্প

নোয়াখালীর হাতিয়ায় মেঘনার মোহনায় নদী আর সাগরের ঢেউ খেলা এক অপূর্ব দৃশ্যের দেখা মেলে। নীল জলরাশির সৌন্দর্য ঘেরা এই স্থানটি পরিচিত ‘কমলার দিঘি’ নামে, যার পাশে বিস্তৃত সাগর সৈকত। চারপাশে ঘেরা কেওড়ার বন প্রকৃতির এক অন্যরকম সৌন্দর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

সবুজ আর নীলের মিতালি

হাতিয়ার কমলার দিঘি সমুদ্র সৈকত যেন এক ম্যানগ্রোভ বনের সবুজের চাদরে ঢাকা। নীল জলের ঢেউ, কেওড়ার বন, আর সাগরের শীতল বাতাস যে কোনো দর্শনার্থীর মন ছুঁয়ে যাবে। এই দিঘি নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার বুড়িরচর ও চরঈশ্বর ইউনিয়নের সীমান্তে মেঘনার তীরবর্তী স্থানে অবস্থিত।

একসময় নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল এই দিঘি। পশ্চিমে সমভূমি, উত্তর-দক্ষিণে ম্যানগ্রোভ বন আর পূর্বে সাগরের বুকে ঢেউ খেলা—এই মিলনস্থলটি আজ পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়। বিশেষত ছুটির দিনগুলোতে এটি পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে।

নামকরণের গল্প

স্থানীয়দের মতে, সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের সময় একদল নারী শ্রমিকের সহায়তায় একটি পুকুর খনন করা হয়েছিল। প্রকল্প পরিচালক এক নারী শ্রমিকের নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার নাম কমলা। সেই থেকে পুকুরটির নাম হয় ‘কমলার দিঘি’। কালের পরিক্রমায় এই নামটি সংযুক্ত হয় সমুদ্র সৈকতের সঙ্গে, যা আজ ‘কমলার দিঘি সমুদ্র সৈকত’ নামে পরিচিত।

পর্যটকদের জন্য আকর্ষণ

বিচটির উত্তরে পলি জমে তৈরি উঁচু স্থানে মৎস্য আহরণকারীরা মাছ শিকারের জন্য ঘের নির্মাণ করেন। পর্যটকরা এখানে আসার পর মাছ ধরার দৃশ্যও উপভোগ করেন। স্থানীয় ও বাইরের অনেক পর্যটক এই সৌন্দর্যের টানে এখানে ভিড় জমান।

হাতিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুব মুর্শেদ লিটন জানান, পর্যটকদের সুবিধার্থে নৌ-যাতায়াতসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি আশ্বস্ত করেন যে, পর্যটকরা নিরাপদে বিচের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসতে পারবেন এবং থাকার বিষয়েও কোনো অসুবিধা হবে না।

স্থানীয়দের অভিজ্ঞতা

স্থানীয় এক দর্শনার্থী তাহসান আমির বলেন, “কমলার দিঘির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করে। যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হলে বাইরের পর্যটকের সংখ্যা আরো বাড়ত। তবে বালি উত্তোলনের কারণে কিছু জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে, যা প্রাকৃতিক দুর্যোগে আরো তীব্র আকার ধারণ করে।”

একটি স্থানীয় চা দোকানের মালিক মান্নান জানান, “বন্ধের দিনে লোকজন এখানে সৌন্দর্য দেখতে আসে, তখন দোকানে ভালো বিক্রি হয়। এছাড়া দিঘির খোলা জায়গায় ছেলেরা খেলাধুলা করে, যা দর্শনার্থীদের আনন্দ দেয়।”

কীভাবে যাবেন

ঢাকা সদরঘাট বা চেয়ারম্যান ঘাট থেকে নৌপথে হাতিয়া উপজেলায় পৌঁছে ওছখালী হয়ে পূর্ব দিকে ৪ কিলোমিটার দূরে কাজীর বাজারে যেতে হবে। সেখান থেকে দক্ষিণে ১.৫ কিলোমিটার গেলেই পৌঁছানো যাবে কমলার দিঘি। এছাড়া হাতিয়ার দক্ষিণ দিক থেকেও সহজেই বিচে আসা যায়। এটি স্থানীয়দের কাছে ‘তেলাপিয়া মার্কেট’ নামেও পরিচিত।

কমলার দিঘি সমুদ্র সৈকত তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দিয়ে দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করছে এবং এটি ধীরে ধীরে একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *